|

জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদ কত বছর?

জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদ কত বছর? স্মার্ট কার্ডের মেয়াদ কত বছর এবং আইডি কার্ডের পেছনে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া থাকলে সেই কার্ডটি ব্যবহার করা যাবে কিনা, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এখানে।

বাংলাদেশের ২০০৭ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যারা ভোটার নিবন্ধন করেছেন, তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদকাল ছিল ১৫ বছর। ২০১৭ সাল থেকে ২ বছর মেয়াদী জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান করা হয়েছিল। কারণ নির্বাচন কমিশন চেয়েছিল ২ বছর পর থেকেই সকল নাগরিকদের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করতে। 

কিন্তু সকলে স্মার্ট কার্ড পায়নি এবং অধিকাংশ মানুষেরই এনআইডি কার্ডের মেয়াদকাল শেষ হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় প্রাথমিকভাবে পুনরায় NID কার্ড রিনিউ করার কথা থাকলেও, নাগরিক ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে আইডি কার্ডের মেয়াদকাল সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। 

তাই বর্তমানে জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদ কত বছর এবং স্মার্ট কার্ডের মেয়াদ কত বছর করা হয়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন এখানে।

জাতীয় পরিচয় পত্র কত বছর মেয়াদী হয়?

বর্তমানে জাতীয় পরিচয় পত্র মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্য বা আজীবনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ জাতীয় পরিচয়পত্রের বা স্মার্ট কার্ডের জন্য এখন থেকে আর কোন মেয়াদকাল রাখা হয়নি। 

বাংলাদেশের Election Commission এর জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের তথ্য অনুসারে জানা যায়, ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন। তখন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনকারী নাগরিকদের লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েছিল বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুনঃ Services nidw gov bd | NID কার্ডের সকল সেবা এক ঠিকানায়

২০০৭ সাল থেকে প্রদানকৃত সেই জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদ ছিল ১৫ বছর। তখন স্থায়ীভাবে সারা জীবন ব্যবহারের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র দেওয়া হয়নি। ২০১৭ সালে আবার ভোটার তালিকা হালনাগাদের পর থেকে মাত্র ২ বছরের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছিল।

কারণ, ২০১৯ সাল থেকে সেই ভোটারদের জাতীয় পরিচয় পত্র গুলো স্মার্টকার্ডে রূপান্তর করতে চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ২০১৭ সালের পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষের মতো ভোটার আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে।

২০১৯ সালে সেই সকল জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদকাল শেষ হয়ে গেলেও, স্মার্ট কার্ডের যেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল, তার সম্পন্ন করতে পারেনি ইলেকশন কমিশন। এমতাবস্থায়, সেই এক কোটি ১০ লক্ষ জাতীয় পরিচয়পত্রের মেয়াদকাল অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, যাদের ভোটার আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা পুনরায় অনলাইন থেকে নতুন আইডি কার্ডের কপি উত্তোলন/ ডাউনলোড করতে পারবে। এর জন্য তাদের কোনো ফি প্রদান করতে হবে না।

অর্থাৎ যাদের ভোটার আইডি কার্ডের পেছনে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া রয়েছে, তারা https://services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে বিনামূল্যে জাতীয় পরিচয় পত্র উত্তোলন করবে। নতুনভাবে উত্তোলন করা এই আইডি কার্ডের কোন মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া থাকবে না।

এছাড়াও এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে- সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সেবা গ্রহীতার আইডি কার্ডটি NID System থেকে চেক করে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে পারবে। মেয়াদের কারনে সেবা গ্রহীতাকে কোনো সেবা প্রদান থেকে বঞ্চিত না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে Election Commission।

অনির্দিষ্টকাল মেয়াদী আইডি কার্ড যেভাবে পাবেন?

কিছুকাল পূর্বে একটি বিশেষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল যে, যাদের এনআইডি কার্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে তারা নতুনভাবে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে কিংবা অনলাইনে রিনিউ ফি পরিশোধ করে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য এপ্লিকেশন করবে। 

যদিও এই বিষয়ে ২০২৩ সালে বিশেষ চিন্তার সম্মুখীন হয়েছিল সাধারণ জনগণ। কারণ যারা ২০০৮ সালের আগে ভোটার আইডি নিবন্ধন করেছিল, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের মেয়াদকাল ছিল ১৫ বছর। অর্থাৎ পুনরায় ২০২৩ সালে রিনিউ করার প্রয়োজন হতে পারতো।

আরও পড়ুনঃ অনলাইনে নতুন আইডি কার্ড করার নিয়ম। নতুন ভোটার আবেদন ২০২৪

কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে যারা ভোটার নিবন্ধন করেছিল তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদকাল ছিল মাত্র ২ বছর। কারণ দুই বছর পর স্মার্ট কার্ড হাতে তুলে সেই জাতীয় পরিচয় পত্রটি অব্যবহারযোগ্য করা হতো। 

কিন্তু নির্বাচন কমিশন থেকে বাংলাদেশের সকল নাগরিকদের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণে ব্যর্থ হওয়ায়, আইডি কার্ডের মেয়াদকাল অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানো হয়েছে।

২০২০ সালের এক বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে যে, NID Wing সার্ভারে NID Number দিয়ে অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করে বিনামূল্যে মেয়াদহীন জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি উত্তোলন করা যাবে। যেহেতু অনলাইন থেকে উত্তোলন করা সেই কপিতে কোন মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ থাকবে না, তাই বলা যায় জাতীয় পরিচয় পত্র মেয়াদকাল স্থায়ী করা হয়েছে।

এমতাবস্থায়, যাদের জাতীয় পরিচয় পত্র পেছনে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ করা রয়েছে, তাদের চিন্তার প্রয়োজন নেই। কারণ বর্তমানে আইডি কার্ডের মেয়াদকাল না দেখে সেবা প্রদান করতে সকল প্রতিষ্ঠানকে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। 

তাই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও সমস্যা নেই। তবে আপনি চাইলে NIDW ওয়েব সাইটে এনআইডি অ্যাকাউন্ট খুলে নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি সংগ্রহ করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ এনআইডি একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম | NIDW Account Registration

স্মার্ট আইডি কার্ডের মেয়াদকাল কত বছর?

স্মার্ট কার্ডের মেয়াদ আজীবন/ অনির্দিষ্টকালের জন্য। আমরা যারা স্মার্ট কার্ড পেয়েছি, তারা খেয়াল করলে দেখতে পাবেন স্মার্ট কার্ডের পেছনে কোন মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নেই। অর্থাৎ স্মার্ট কার্ডটি একজন ব্যক্তি আজীবন ব্যবহার করতে পারবে। 

এমনকি, পূর্বে যাদের এনআইডি কার্ডের লেমিনেটেড প্রিন্টেড কপি ছিল, তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের মেয়াদ কাল অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়ানো হয়েছে। তাই বলা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয় পত্রের বা স্মার্ট কার্ডের মেয়াদ আজীবন।

আরও পড়ুনঃ স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাবো ও কখন পাবো জেনে নিন

শেষকথা

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জাতীয় পরিচয় পত্র মেয়াদ কত বছর এবং স্মার্ট কার্ডের মেয়াদ কত বছর সে সম্পর্কে জানতে পারলাম। যদি কারো পুরাতন জাতীয় পরিচয় পত্রের পেছনে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লেখা থাকে, তাহলে অনলাইন থেকে নতুন মেয়াদহীন কপিটি ডাউনলোড করে নিবেন। ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *