ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার নিয়ম ২০২৪
ভিন্ন নাম, ঠিকানা ও বয়স ব্যবহার করে একাধিক ভোটার আইডি কার্ড করে থাকলে, যত দ্রুত সম্ভব আপনার ডুপ্লিকেট ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করে নিন।
কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বা ভুলে একাধিকবার ভোটার নিবন্ধন করে থাকলে, কিংবা বয়স বেশি দেখিয়ে অল্প বয়সেই ভোটার হলে, আইনগতভাবে তার জেল বা জরিমানা হতে পারে। কারণ নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজ থেকে সেই ব্যক্তির একাধিক আইডি কার্ডের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিং হয়ে, সে ধরা পড়ে যাবে।
এক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আগেই, নিজ দায়িত্বে জেলা নির্বাচন অফিসে ক্ষমা চেয়ে ভোটার আইডি কার্ড বাতিলের আবেদন করতে হবে। নাহলে তথ্য হালনাগাদ করে তার শাস্তি নিশ্চিত করা হতে পারে।
সাধারণত মৃত ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ড সরকারিভাবেই বাতিল করা হয়। কিন্তু জীবিত অবস্থায় কেউ তার দ্বৈত ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে চাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম নীতি মানতে হবে।
তাই ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে কোথায় আবেদন করবেন, কিভাবে আবেদন করবেন, কি কি লাগবে এবং কত টাকা ও কতদিন লাগবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এখানে।
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার নিয়ম
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য, জেলা নির্বাচন অফিসারের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও আইডি কার্ড বাতিলের লিখিত আবেদন করতে হবে। এর সাথে ডুপ্লিকেট NID Card ও অন্যান্য ডকুমেন্ট জমা দিয়ে, আবেদন ফি পরিশোধ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে জমা দিন।
ব্যাস, এবার বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী আপনার তথ্য যাচাই করা হবে। তারপর আপনার আবেদনের কারন যুক্তিসঙ্গত হলে, ডুপ্লিকেট NID Card টি বাতিল করে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুনঃ NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার নিয়ম ২০২৪
কখন ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার প্রয়োজন হয়?
সাধারনত বাংলাদেশের ১ জন নাগরিক সর্বোচ্চ ১ বার ভোটার নিবন্ধন করতে পারবে। কিন্তু একাধিকবার ভোটার আইডি কার্ডের জন্য নিবন্ধন করা আইনগত ভাবে দন্ডনীয় অপরাধ।
কোন ব্যক্তি যদি একাধিকবার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে NID Card করে থাকে, তাহলে তার বাড়তি কার্ডটি বাতিল করতে হবে।
এক্ষেত্রে যেসকল কারনে আপনার ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করা প্রয়োজন, সেগুলো হলো:
(১) দ্বৈত ভোটার নিবন্ধন করে থাকলে
দ্বৈত ভোটার বলতে, একজন ব্যক্তির একাধিক ভোটার নিবন্ধন করাকে বুঝায়। এক্ষেত্রে হয়তো তিনি ভিন্ন ভিন্ন তথ্য ব্যবহার করে নিবন্ধন করেছে।
ভুল করে কিংবা স্বেচ্ছায়, যেভাবেই হোক না কেন, একাধিক আইডি কার্ড হয়ে গেলে, যেকোন ১টি বাতিল করিয়ে নিতে হবে। অন্যথায়, সেই ব্যক্তির কঠোর শাস্তি বা জরিমানা হতে পারে।
ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম ডিজিটালাইজড হওয়ায়, Fingerprint চেক করে ডুপ্লিকেট এন্ট্রি শনাক্ত করা যায়। এবং যখন কেউ একাধিক নিবন্ধনের চেষ্টা করে ধরা পড়বে, তার কঠিন শাস্তি হবে।
তাই, আপনার একাধিক নিবন্ধন বা আবেদন হয়ে গেলে, ডুপ্লিকেট NID Card এর এন্ট্রি তথ্য গুলো বাতিল করে নিন। এর জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জেলা পর্যায়ের কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করলেই হবে।
আরও পড়ুনঃ Services nidw gov bd | NID কার্ডের সকল সেবা এক ঠিকানায়।
(২) কম বয়সে ভোটার হয়ে গেলে
বাংলাদেশে ১৮/১৬ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের ভোটার নিবন্ধন করা এখন দৈনন্দিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই তাড়াতাড়ি বিদেশ যেতে বা অন্যান্য সুবিধা ভোগের জন্য, বয়স বেশি দেখিয়ে NID Card করে থাকে।
কিন্তু পরবর্তীতে সেই ব্যক্তির কোন প্রাতিষ্ঠানিক কাগজপত্রের সাথে যদি সেই NID কার্ডের বয়স না মিলে, তবে সেটি বাতিল করে নিতে হবে। অন্যথায়, আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে কি কি লাগে
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য প্রয়োজনীয় মূল ডকুমেন্ট হলো জেলা নির্বাচন অফিসার বরাবর একটি লিখিত আবেদন।
কিন্তু শুধুমাত্র এই আবেদন জমা দিলেই হবে না। বরং এর পাশাপাশি অন্যান্য কিছু কাগজপত্রও জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে যেগুলো প্রয়োজন হতে পারে, সেগুলো হলো:
- যেই NID Card টি বাতিল করতে চান, তার ফটোকপি।
- দ্বৈত ভোটার হয়ে থাকলে, যেই কার্ডটি বাতিল করতে চান, এবং যেই কার্ডটি ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে চান, উভয়ের ফটোকপি।
- বয়স কম হলে, আইডি কার্ডধারী ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনের কপি।
- পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি।
- এছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কোন ডকুমেন্টস (যদি থাকে)।
আরও পড়ুনঃ এন আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার উপায়
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার উপায় হিসেবে যে ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে, সেগুলো হলো:
- জেলা নির্বাচন অফিসে লিখিত আবেদন জমা দিন।
- আবেদনপত্রের সাথে Duplicate NID Card ও সঠিক/ স্থায়ী NID কার্ডের কপি জমা দিন।
- আপনার সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করুন।
- আবেদন ফি পরিশোধ করে রশিদ জমা দিন।
- NID Card বাতিল করিয়ে নিন।
উপরোক্ত ধাপগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
ধাপ ১: জেলা নির্বাচন অফিসে লিখিত আবেদন জমা
প্রথমেই, আপনার সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা, অর্থাৎ জেলা নির্বাচন অফিসার বরাবর একটি লিখিত ক্ষমা প্রার্থনা ও ভোটার আইডি বাতিলের আবেদন জমা দিতে হবে।
আবেদনপত্রে উল্লেখ করবেন যে, আপনি ভুলবশত একাধিকবার ভোটার নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে ফেলেছেন। সেজন্য আপনি আইন ভঙ্গের দায়ে ক্ষমা চেয়ে নিবেন।
তারপর আপনার উত্তর ডুপ্লিকেট আইডি কার্ডটি বাতিল করতে চান এই মর্মে সম্পূর্ণ দরখাস্ত লিখুন। আবেদন পত্র আপনার সঠিক ও স্থায়ী এন আইডি কার্ডের তথ্য উল্লেখিত থাকতে হবে।
পাশাপাশি, যেই আইডি কার্ডটি বাতিল করতে চান সেটির সম্পূর্ণ তথ্যও লাগবে। এছাড়াও আবেদন পত্রের শেষের দিকে লিখে দিবেন যে, আপনি কি কি প্রমাণপত্র যুক্ত করেছেন।
ধাপ ২: ডুপ্লিকেট এন আইডি কার্ডটি জমা দিন
এবার জেলা নির্বাচন অফিসে আপনার Duplicate ভোটার আইডি কার্ডটি বা Duplicate স্মার্ট কার্ডটি জমা দিন।
এরই সাথে, আপনি যেই আইডি কার্ডটি ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে চান বা দুটির মধ্যে যেটি রাখতে চান, সেই এনআইডি কার্ডেরও ফটোকপি দিতে হবে। এর দ্বারা সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তা আপনার এই ডকুমেন্ট যাচাই বাছাই করবেন।
ধাপ ৩: আপনার সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করুন
আপনি যেই এনআইডি কার্ড টি বাতিল করতে চাচ্ছেন, সেটির মালিক যে আপনি, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এর জন্য আপনার আসল ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিলেই হবে। তবে আসল কার্ডটি সাথে না থাকলে বা অন্য কিছু ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের কপি জমা দিতে পারেন।
এই তথ্যগুলোর মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আপনার পরিচয় নিশ্চিত করবে।
ধাপ ৪: NID Cancel -এর আবেদন ফি পরিশোধ করে
এবার, সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে আপনাকে আইডি কার্ড বাতিলের আবেদনের জন্য ফি পরিশোধ করতে বলা হবে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সরকারি ফি থাকলে, তা যথানিয়মে ব্যাংকের A-Challan এর মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
আবেদন ফি পরিশোধের পর, প্রাপ্ত A-Challan -এর কপিটি এনআইডি কার্ড বাতিলের আবেদনের সাথে যুক্ত করে জমা দিতে হবে।
ধাপ ৫: নির্বাচন কমিশন থেকে NID Card বাতিল
উপরোক্ত সবগুলো ধাপ সম্পন্ন করার পর, নির্বাচন কমিশন থেকে আপনার Duplicate ভোটার আইডি কার্ড বাতিলের আবেদনটি গ্রহণ করা হবে।
তারপর সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে, পর্যায়ক্রমিকভাবে অফিসিয়াল কার্যক্রম সম্পন্ন আপনার ডুপ্লিকেট এন আইডি কার্ডটি বাতিল করা হবে। এক্ষেত্রে সর্বমোট ১ মাস কিংবা তারও বেশি সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করার নিয়ম | NID Correction
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে কত টাকা লাগে?
এন আইডি কার্ড বাতিল করতে চাইলে আপনার ১০০-২০০ টাকা লাগতে পারে। তবে আনুষাঙ্গিক খরচ ও জেলা নির্বাচন অফিসে যাতায়াত খরচ ইত্যাদি বাবদ সর্বমোট ৫০০-৬০০ টাকা খরচ হতে পারে।
যাইহোক, এই পরিমান টাকা খরচ হলেও আপনি বড় কোন জরিমানা বা শাস্তি থেকে বাচতে পারবেন। সেটাই হলো মূখ্য বিষয়।
ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে কত দিন লাগে?
ভোটার আইডি কার্ড যদি বাতিল করতে চান, তাহলে প্রথমেই জেলা নির্বাচন অফিসে লিখিত আবেদন করতে হবে। এই আবেদন করার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আপনার তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করে দেখবে।
তারপর আবেদন এপ্রুভ হলে, ১ মাসের মধ্যেই আপনার কার্ডটি বাতিল করা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, অল্প কয়েকদিন বেশি সময় লাগতে পারে।
তবে চেষ্টা করবেন যেন সঠিক কাগজপত্র দিয়ে উপযুক্ত ভাবে আবেদন করতে পারেন। তাহলেই সামগ্রিক কার্যক্রম দ্রুত হবে।
আরও পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ডের ছবি ও স্বাক্ষর পরিবর্তন করুন।
ডুপ্লিকেট ভোটার নিবন্ধন করলে কি কি শাস্তি হতে পারে?
একজন ব্যক্তি একাধিকবার ভোটার নিবন্ধন করলে, তার শাস্তি হবে-
- ১০ হাজার টাকা জরিমানা,
- ৬ মাসের কারাদন্ড,
- বা উভয় দন্ড একসাথে।
অর্থাৎ, ভুলবশত বা ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন ব্যক্তি নিজের নাম, ঠিকানা, বয়স ইত্যাদি পরিবর্তন করে একাধিক নিবন্ধন করতে চাইলে, সেটি হবে আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
এর কারনে সেই ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে, উপরোক্ত দন্ড বা শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে।
FAQ’s
(১) ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করা যায় কি?
হ্যাঁ। আপনার জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসারের কাছে আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য লিখিত আবেদন করে NID Card Cancel করতে পারবেন।
(২) আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য কোথা আবেদন করতে হবে?
আপনার এন আইডি কার্ড বাতিল করার জন্য সরাসরি আপনার জেলা নির্বাচন অফিসে কর্মরত নির্বাচন কমিশন অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে।
শেষকথা
উপরোক্ত আলোচনা থেকেই আপনারা জানতে পারলেন, কিভাবে দ্বৈত ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করতে পারবেন।
যাইহোক, যেহেতু একাধিক ভোটার নিবন্ধন করা একটি দন্ডনীয় অপরাধ, সুতরাং যথাসম্ভব দ্রুত আবেদন করে এটি বাতিল করে নিন।
অন্যথায়, শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে। আশাকরি সম্পূর্ণ আলোচনাটি বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।