ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করার নিয়ম | NID Correction

আপনাদের ভোটার আইডি কার্ডের কোন তথ্য সংশোধন বা পরিবর্তন করতে চাইলে, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদনের বিস্তারিত প্রক্রিয়া জেনে নিন এখানে।

বিভিন্ন সময় আমাদের ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। কারণ আইডি কার্ডের সাথে আমাদের সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন বা পাসপোর্টের তথ্যের মিল নাও থাকতে পারে। এমতাবস্থায়, নানান জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং আমরা অনেক প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হই।

কিন্তু আপনার কাছে যদি NID card correction এর জন্য উপযুক্ত প্রমান থাকে, অর্থাৎ কাঙ্খিত তথ্যেত স্বপক্ষে কার্যকর ডকুমেন্টস থাকে, তাহলেই সেই তথ্য সংশোধন করে নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি অনলাইনে NIDW ওয়েবসাইটে বা সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েও আবেদন করতে পারবেন।

আমাদের এই আলোচনায় অনলাইন ও নির্বাচন অফিস, উভয় পদ্ধতিতে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করার নিয়ম, কি কি লাগে, কত টাকা লাগে, কত দিন লাগে ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে সর্বপ্রথম nidw.gov.bd -এই ওয়েবাসাইটে ভিজিট করে রেজিস্টার করুন। তারপর ড্যাশবোর্ড থেকে বিস্তারিত প্রোফাইলে গিয়ে এডিট বাটনে ক্লিক করুন। এবার চাহিত তথ্যের পাশের বক্সে টিক দিয়ে নতুন তথ্য লিখুন। তারপর সংশোধন ফি দিয়ে, প্রমানপত্র আপলোড করে সাবমিট করুন।

নির্ধারিত সময়ের পরই আপনার NID কার্ডের সংশোধিত কপিটি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন। 

(বি:দ্র: খেয়াল রাখবেন NID কার্ডের কোন নির্দিষ্ট একটি তথ্য শুধুমাত্র একবারই সংশোধন করা যায়। তাই, তথ্য সংশোধনের আবেদনে সঠিকভাবে বানান ও সত্য তথ্য লিখবেন। অন্যথায়, পরবর্তীতে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।)

আরও পড়ুনঃ এন আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে চাইলে, নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে। এর জন্য আগে থেকেই আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো কম্পিউটার বা মোবাইলে (যেই ডিভাইস থেকে আবেদন করবেন) সংগ্রহ করে নিন।

তারপর ছবিসহ দেখানো নিচের ধাপগুলো পর্যায়ক্রমিক ভাবে অনুসরণ করুন:

ধাপ ১: নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন 

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে NIDW ওয়েবসাইটে একটি NID একাউন্টের নিবন্ধন করতে হবে। অথবা, আগে থেকেই এখানে একাউন্ট রেজিস্টার করা থাকলে আপনার একাউন্টে লগইন করতে হবে। 

NID ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করার জন্য সর্বপ্রথম https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ এই লিংকে ভিজিট করতে হবে। তারপর আপনার সামনে রেজিস্টার অপশন দেখতে পাবেন। এখান লগইন অপশনও থাকবে। নতুন রেজিস্টার করার জন্য আপনি রেজিস্টার লেখাতে ক্লিক করুন।

একাউন্ট রেজিস্টার করার জন্য আপনার NID নাম্বার ও জন্মতারিখ লিখুন। তারপর ক্যাপচা পূরন করে সাবমিট করুন। তারপর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সিলেক্ট করুন। এবার মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই করে, NID Wallet দিয়ে ফেস ভেরিফাই করে ও একটি পাসওয়ার্ড দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করুন।

আরও পড়ুনঃ এনআইডি একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম | NIDW Account Registration

ধাপ ২: প্রোফাইল অপশনে যান

এবার আপনার সামনে একটি ড্যাশবোর্ড ওপেন হবে। এখানে আপনি এনআইডি কার্ডের প্রয়োজনীয় সেবা সমূহের তালিকা দেখতে পাবেন। এখানে থেকে প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী পেইজে যান।

ধাপ ৩: চাহিত সংশোধনের তথ্য পূরণ করুন

প্রোফাইল অপশনে প্রবেশ করার পর, ডানপাশে একটি এডিট অপশন দেখতে পাবেন। এখানে ক্লিক করলে পেজটি রিলোড হয়ে চাহিত সংশোধিত তথ্য লেখার অপশন আসবে। তারপর আপনি যেই তথ্য সংশোধন করতে চান, তার ক্যাটাগরি অনুযায়ী ব্যক্তিগত/ অন্যান্য/ ঠিকানার তথ্য অপশন থেকে একটি ক্যাটাগরি সিলেক্ট করুন।

সেখানে ক্যাটাগরি ভিত্তিক সকল তথ্য থাকবে এবং সাথে একটি করে খালিঘর থাকবে। সেই তথ্যের পাশের ছোট বক্সে টিক দিলেই খালিঘরে নতুন তথ্য লিখতে পারবেন। এবার আপনি যেই তথ্যটি সংশোধন করতে চান, সেই তথ্যের পাশের খালিঘরে আপনার কাঙ্খিত তথ্যটি লিখুন। সকল চাহিত তথ্য সঠিকভাবে লেখার পর পরবর্তী লেখাতে ক্লিক করে নেক্সট পেইজে যান।

আরও পড়ুনঃ Services nidw gov bd | NID কার্ডের সকল সেবা এক ঠিকানায়

ধাপ ৪: সংশোধিত তথ্য পূনর্যাচাই

নতুন পেইজ ওপেন হলে, এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য যেসকল তথ্য পূরন করেছেন, সেগুলোর বর্তমান তথ্য ও সংশোধিত তথ্য এই পেইজে দেখানো হবে। এখানে থাকা তথ্যগুলো ঠিক আছে কিনা যাচাই করুন। কারন এন আইডি কার্ডের একটি তথ্য শুধুমাত্র একবারই সংশোধন করা যায়। তাই ভুল তথ্য দিলে, আবার তা সংশোধন করতে পারবেন না।

সকল তথ্য ঠিক থাকলে পরবর্তী পেইজে যান। তথ্য ভুল থাকলে ‘পেছনে’ লেখাতে ক্লিক করে পূর্বের পেইজে গিয়ে আরেকবার এডিট করুন।

ধাপ ৫: NID Correction ফি পরিশোধ করুন

অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে চাইলে বিকাশ/ নগদ/ রকেট/ উপায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এনআইডি সংশোধন ফি পরিশোধ করতে হবে।

তবে যেসকল তথ্য সংশোধনের জন্য অনলাইনে আবেদন না করে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হয়, সেগুলোর সংশোধন ফি অনুমোদিত কোন ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করাই উত্তম। কারন তাহলে আপনি একটি ব্যাংক রিসিট পাবেন।

বিকাশের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে, সর্বপ্রথম আপনার বিকাশ অ্যাপে প্রবেশ করুন। তারপর পে বিল অপশন থেকে NID Service সিলেক্ট করুন। নতুন ওপেন হলে আপনার NID Number লিখে সাবমিট করুন। তারপর সংশোধনের ধরন সিলেক্ট করলে সংশোধন ফি এর পরিমান দেখাবে। সেখান থেকে পরবর্তী পেইজে গিয়ে আপনার বিকাশ PIN Code লিখে সাবমিট করুন। এবার ট্যাপ করে ধরে রাখলেই পেমেন্ট সম্পন্ন হয়ে যাবে।

ধাপ ৬: আইডি কার্ড সংশোধনের কাগজপত্র আপলোড

বিকাশ/ নগদ ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এনআইডি সংশোধন ফি পরিশোধ করার পর পূনরায় NIDW ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে। সেখানে আপনাকে নতুন একটি পেইজে নিয়ে যাবে। এই পেইজে এন আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য উপযুক্ত কাগজপত্র আপলোড করতে হবে। 

এখানে সংশোধনের তথ্যের সাথে মিল রেখে উপযুক্ত কাগজপত্র/ ডকুমেন্টস আপলোড না করলে আবেদন বাতিল করা হতে পারে। তাই আবেদনের স্বপক্ষে উপযুক্ত ডকুমেন্ট আপলোড করুন।

ধাপ ৭: সংশোধন আবেদন সাবমিট করুন

এবার আপনার সাবমিট করা সকল তথ্য এখানে দেখতে পারবেন। সকল তথ্য ঠিক থাকলে আবেদন সাবমিট করুন এবং পূনরায় সাবমিট করে নিশ্চিত করুন। 

এভাবেই আপনার আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেন। 

ধাপ ৮: এনআইডি সংশোধন ফরম ডাউনলোড করুন

এনআইডি কার্ডের সংশোধন আবেদন সাবমিট করার পর, ড্যাশবোর্ড থেকে পূনরায় প্রোফাইল অপশনে যেতে হবে। সেখানে আবেদন ফরম ডাউনলোড করার একটি অপশন পাবেন।

এখান থেকে ডাউনলোড লেখাতে ক্লিক করে, এই ফরমটির পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে রাখুন। এটি পরবর্তীতে আপনার প্রয়োজন হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ NID সংশোধন আবেদন বাতিল করার নিয়ম ২০২৪

অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করার নিয়ম 

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে

  • সর্বপ্রথম, nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
  • তারপর রেজিস্টার বা লগইন করুন।
  • এবার ড্যাশবোর্ড থেকে প্রোফাইল অপশনে যান।
  • এডিট লেখাতে ক্লিক করে, চাহিত তথ্যের পাশের বক্সে টিক দিয়ে সঠিক তথ্য লিখুন।
  • বিকাশে NID Service ফি পরিশোধ করুন।
  • ডকুমেন্ট আপলোড করে, আবেদনের তথ্য রিভিউ করে সাবমিট করুন।

এভাবেই নিজে নিজে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

উপজেলা নির্বাচন অফিসে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন

এন আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা তূলনামূলকভাবে জটিল। যেহেতু একটি তথ্য শুধুমাত্র একবারই সংশোধন জরা যায়, তাই আবেদনটি শতভাগ সঠিকভাবে করতে আপনি উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকেই আবেদন করতে পারবেন। 

এছাড়াও সকল তথ্যও অনলাইনে সংশোধন করা যায়না। যেমন: ভোটার এলাকা বা স্থায়ী ঠিকানা, নিজের বা পিতা-মাতার সম্পূর্ণ নাম ইত্যাদি তথ্য সংশোধন করতে চাইলে সরাসরি স্থানীয় নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হয়। তাই উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করার এবং আবেদন পদ্ধতি সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা আছে।

এক্ষেত্রে আবেদন পদ্ধতি হলো- সরাসরি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হতে হবে। তারপর অফিস থেকে সংশোধনের বিষয়বস্তু অনুযায়ী একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। তারপর সকল কাগজপত্র একসাথে করে আবেদন জমা দিতে হবে। পাশাপাশি নিকটবর্তী কোন ব্যাংক থেকে (যেসকল ব্যাংক NID Service Fee গ্রহনের জন্য অনুমোদিত) সংশোধন ফি পরিশোধ করে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।

এক্ষেত্রেও তথ্য সংশোধন হতে অনলাইনে আবেদনের অনুরূপ সময় লাগতে পারে। 

আরও পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ডের ছবি ও স্বাক্ষর পরিবর্তন করুন

ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন

ভোটার আইডি কার্ডে থাকা ব্যক্তির নিজের নাম সংশোধন করতে অনলাইনে আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র নামের বানান ঠিক করা বা নামের একাংশ পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে মূল নাম পরিবর্তন করতে চাইলে বা সংশোধনের বিষয়বস্তুর ব্যাপক পার্থক্য থাকলে তা অনলাইনে সংশোধন করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে।

নামের কিছু অংশ বা বানান অনলাইনে সংশোধন করতে চাইলে নিম্নোক্ত ডকুমেন্টস গুলো প্রয়োজন হবে:

  • ব্যক্তির এন আইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ/ পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স।
  • চাকরিজীবী হলে এমপিও সিট/ সার্ভিস বহিঃ।
  • বিবাহিত হলে কাবিননামার ফটোকপি জমা দিতে পারেন।

তবে নামের বড় একটি অংশ পরিবর্তন করতে চাইলে, সরাসরি উপজেলায় যেতে হবে। সেখানে সংশোধন ফরম নিয়ে পূরন করতে হবে। তারপর উপরোক্ত কাগজপত্র গুলোর পাশাপাশি-

  • নোটারি পাবলিকের দ্বারা এফিডেভিট করিয়ে। এবং
  • উপজেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের কপি সহ আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাবো ও কখন পাবো জেনে নিন

ভোটার আইডি কার্ডে পিতা-মাতার নাম সংশোধন 

অনেক সময় আমাদের ভোটার আইডি কার্ডে থাকা পিতা-মাতার নামের বানানের সাথে বাবা-মায়ের আইডি কার্ডের নামের মিল থাকে না। সেক্ষেত্রে আমাদের নানান জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই NID কার্ডে পিতা-মাতার নাম সংশোধন করে নিতে পারবেন।

পিতা-মাতার নামের বানান বা আংশিক নাম সংশোধনের জন্য নিম্নোক্ত কাগজপত্র গুলো সংযোজন করতে পারেন:

  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।
  • জন্ম সনদ/ পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স।
  • পিতা-মাতার এন আইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • পিতা-মাতার ডিজিটাল জন্ম সনদ।
  • আবেদনকারীর পিতা-মাতার সকল সন্তানের তথ্য সম্বলিত ওয়ারিশ সনদ।

এছাড়াও নামের বানানে খুব বড় পার্থক্য থাকলে, আপনার সকল ভাই-বোনদের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি সহ জমা দিয়ে আবেদন করতে পারেন। নামের একাংশ বা সম্পূর্ণ নাম সংশোধন করতে চাইলে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হয়ে, যথাযথ প্রমানপত্র দিয়ে আবেদন করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ অনলাইনে নতুন আইডি কার্ড করার নিয়ম। নতুন ভোটার আবেদন ২০২৪

এনআইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন

ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সাধারনত উপযুক্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করেই আমাদের NID Card -এ সংযুক্ত করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরবর্তীতে সাধারণ মানুষ তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে বয়স কমাতে/ বাড়াতে চায়। তাই নির্বাচন কমিশন থেকে এন আইড কার্ডের বয়স সংশোধন করার বিষয়টি কঠিন করা হয়েছে। 

তবে কিছু ক্ষেত্রে আইডি কার্ডের তথ্য সার্ভারে আপলোড করার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের টাইপিং মিস্টেক হয়ে ভূল তথ্য লিপিবদ্ধ হতে পারে। সেক্ষেত্রে উপযুক্ত তথ্যের ভিত্তিতে আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করা যায়। তাছাড়া এন আইডি কার্ডের জন্ম তারিখের সাথে শিক্ষাগত সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্ম তারিখের পার্থক্য থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে উপযুক্ত কাগজপত্রের ভিত্তিতে জন্ম তারিখ সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ডকুমেন্টস জমা না দেওয়ার কারনে জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদন বাতিল করা হয়। তাই এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কাগজপত্র গুলো আবেদনের সাথে সাবমিট করতে পারেন: 

  • বর্তমান NID কার্ডের ফটোকপি।
  • JSC, SSC, HSC বা সমমান শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট।
  • ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ/ ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্টের তথ্য পেইজের কপি।
  • সরকারি চাকরিজীবী হলে এমপিও সিট/ সার্ভিস বহি।
  • বিবাহিত হলে কাবিন নামার কপি।
  • চেয়ারম্যান এর প্রত্যয়ন বা নাগরিকত্ব সনদ।
  • বয়স প্রমাণের প্রত্যয়ন পত্র (কোন সিভিল সার্জনের কাছ থেকে)

এসকল কাগজপত্রের মধ্য থেকে ২-৩ টি কার্যকর ও আবেদনের স্বপক্ষে উপযুক্ত ডকুমেন্ট জমা দিলেই হবে। 

অনলাইনে এন আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন করতে চাইলে, উপরোক্ত ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের নিয়ম অনুসারে আবেদন করুন। এক্ষেত্রে এন আইডি কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্যের ক্যাটাগরিতে গিয়ে জন্ম তারিখ অপশনের পাশের বক্সে টিক দিন। তারপর নতুন ও কাঙ্খিত জন্ম তারিখের দিন, মাস ও বছর লিখুন। তারপর উপরোক্ত নিয়মে বাকি ধাপগুলো সম্পন্ন করে সংশোধনের আবেদন সাবমিট করুন।

ভোটার আইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা সংশোধন

ভোটার আইডি কার্ডের স্থায়ী ঠিকানা সংশোধন করতে চাইলে সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করে এই তথ্য সংশোধন করতে পারবেন না।

উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করার জন্য, সর্বপ্রথম অফিসে উপস্থিত হবে ভোটার মাইগ্রেশন ফরম-১৩ সংগ্রহ করতে হবে। তারপর সেটি যথাযথ তথ্য দিয়ে পূরন করতে হবে। তথ্য পূরনের পর এর সাথে আরও কিছু কাগজপত্র যুক্ত করে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর এন আইডি কার্ডের কপিসহ ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন, বিদ্যুৎ বিলের কপি ও উপজেলা নির্বাচন অফিসের প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। 

আরও পড়ুনঃ ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম ২০২৪

(ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন বলতে, বর্তমান ঠিকানার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং যে স্থানে যেতে চান সেই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উভয় চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র জমা দিতে হবে।) তারপর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য সংশোধিত হবে।

ভোটার আইডি কার্ডের পেশা সংশোধন

অনেক সময় আমাদের ভোটার আইডি কার্ডের তথ্যে থাকা পেশা পরিবর্তন করতে হয়। কারন আমরা সর্বদা একই পেশায় নিয়োজিত নাও থাকতে পারি। আর আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে আমাদের সঠিক পেশার তথ্য থাকা উচিত। এক্ষেত্রে আমরা খুব সহজেই অনলাইনে আবেদন করে ভোটার আইডি কার্ডের পেশা সংশোধন করতে পারি। 

NID Card এর পেশা সংশোধন করতে অনলাইনে আবেদনের সময় নিম্নোক্ত ডকুমেন্টস গুলো যুক্ত করতে হয়:

  • আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • পেশার প্রমানপত্র হিসেবে Employer ID Card।
  • উর্ধতন কর্মকর্তার একপ্টি প্রত্যয়ন পত্র। (অবশ্যই অফিস স্মারক সম্বলিত হতে হবে)

এটি NID Dashboard এর প্রোফাইল অপশনের অন্যান্য তথ্যের ক্যাটাগরিতে পাবেন।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি কত টাকা?

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে, তা নিচে দেওয়া হলো:

এন আইডি কার্ডের তথ্য প্রথমবার সংশোধনের আবেদন করলে আবেদন ফি ২৩০ টাকা। ২য় বার ৩৪৫ টাকা এবং ৩য় বার আবেদন করলে ৪৬০ টাকা ফি দিতে হয়। এছাড়াও ক্যাটাগরি ভিত্তিক সংশোধন ফি এর তালিকা হলো:

সংশোধনের ক্যাটাগরি ফি এর পরিমান
ব্যক্তিগত তথ্য ২৩০ টাকা
অন্যান্য তথ্য ১১৫ টাকা
ব্যক্তিগত ও অন্যান্য – উভয় তথ্য একসাথে ৩৪৫ টাকা
এনআইডি রিইস্যু আবেদন ৩৪৫ টাকা 

এই NID Correction ফি বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি মাধ্যমে দেওয়া যায়। অথবা, উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করলে, অনুমোদিত কোন ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে পারবেন।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে

জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের বিষয়বস্তু অনুযায়ী সংশোধনের সময়কাল নির্ভর করে। এক্ষেত্রে ৪টি ক্যাটাগরিতে সংশোধনের সময়কাল নিচে দেখানো হলো:

সংশোধনেরক্যাটাগরি সংশোধনের নির্ধারিত কার্যদিবস
“ক” ৭ দিন 
“খ” ১৫ দিন 
“গ” ৩০ দিন 
“ঘ” ৪৫ দিন 

আরও পড়ুনঃ ছবি তোলার কতদিন পর এনআইডি কার্ড পাওয়া যায়?

সময়ের এই তারতম্য হওয়ার কারন হলো, তথ্যগুলোর ক্যাটাগরি অনুযায়ী এর এপ্রুভের ভিন্ন ভিন্ন স্তর রয়েছে। এবং এপ্রুভ করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা দায়িত্বপ্রাপ্ত। যেমন:

  • “ক” ক্যাটাগরির আবেদন এপ্রুভ করে উপজেলা নির্বাচন অফিসার।
  • “খ” ক্যাটাগরির আবেদন এপ্রুভ করে জেলা নির্বাচন অফিসার। 
  • “গ” ক্যাটাগরির আবেদন এপ্রুভ করে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার। এবং
  • “ঘ” ক্যাটাগরির আবেদন এপ্রুভ করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের মহাপরিচালক।

সংশোধিত আইডি কার্ড সংগ্রহ

আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন কার্যকর করা হলে আপনার মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দিবে। তারপর ক্যাটাগরি অনুযায়ী সংশোধনের সময়কালের পর আপনার NID Dashboard -এ লগইন করে (services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে) ডাউনলোড লেখাতে ক্লিক করলেই সংশোধিত আইডি কার্ড পাবেন।

তবে এক্ষেত্রে শুধু অনলাইন কপিটিই পাবেন। অন্যদিকে আপনি যদি ঠিকানা সংশোধন করে থাকেন, তাহলে পুনরায় রিইস্যুর জন্য আবেদন করতে হবে। রিইস্যু সম্পন্ন হলে এখান থেকেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *