নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে ২০২৪

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে চাইলে, জেনে নিন নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

বাংলাদেশের একজন নাগরিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়বাচক নথিপত্র হলো NID Card। প্রাপ্তবয়স্ক সকল নাগরিকদের-কে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটার আইডি কার্ড প্রদান করা হয়।

এর জন্য সর্বপ্রথম আবেদনকারী যাবতীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে। তারপর বায়োমেট্রিক তথ্য দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় আবেদনকারীকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জমা দিতে হয়। পাশাপাশি সেই ব্যক্তিকে ভোটার নিবন্ধনের জন্য উপযুক্ত হওয়ার শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।

তাই নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে, ভোটার হওয়ার জন্য আবেদনর পূর্বশর্ত কি কি এবং কত টাকা লাগে সে সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন এখানে।

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদনর পূর্বশর্ত

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করার আগে আবেদনকারীর জন্য কিছু পূর্বশর্ত রয়েছে। ভোটার হিসেবে নিজের তথ্য নিবন্ধন করার জন্য প্রত্যেককেই এই শর্তাবলী অবশ্যই পূরণ করতে হবে। অন্যথায় নিবন্ধন করা যাবেনা। ভোটার হওয়ার জন্য আবেদনর যোগ্যতা বা পূর্বশর্ত গুলো হলো:

  • সর্বপ্রথম আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। 
  • আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর হতে হবে। 
  • পূর্বে ভোটার নিবন্ধন করেনি এমন ব্যক্তিরাই নিবন্ধন করতে পারবে।

উপরোক্ত শর্তাবলী পূরণ করে যদি কোন ব্যক্তির মাঝে আবেদনের যোগ্যতা থাকে, তাহলে সে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে কিংবা অনলাইনে নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবে। 

আরও পড়ুনঃ অনলাইনে নতুন আইডি কার্ড করার নিয়ম। নতুন ভোটার আবেদন ২০২৪

নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে ২০২৪

নতুন ভোটার হতে আবেদনকারীর ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ, বাবা, মা, স্বামী/ স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি, হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। 

এছাড়াও আবেদনকারীর পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স, রক্তের গ্রুপ টেস্টের রিপোর্ট, পেশা প্রমাণের প্রত্যয়ন পত্র, ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামা ইত্যাদি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ Services nidw gov bd | NID কার্ডের সকল সেবা এক ঠিকানায়

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে

নতুন ভোটার আইডি কার্ড করতে যে সকল কাগজপত্র লাগে, সেগুলো হলো: 

  • অনলাইন করা জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি
  • আবেদনকারীর সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট।
  • পিতা-মাতার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি।
  • আবেদনকারীর সংশ্লিষ্ট ঠিকানার হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করতে PSC/ JSC/ SSC অথবা সমমান পরীক্ষার সার্টিফিকেট।
  • প্রয়োজন অনুসারে পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে/ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট না থাকলে)
  • রক্তের গ্রুপ টেস্ট করার রিপোর্ট।
  • পেশার প্রমাণপত্র হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছে, সেখানের Employer ID বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রত্যয়ন পত্র।
  • পাশাপাশি, অনলাইনে আবেদন করে থাকলে আবেদনের প্রিন্ট কপি উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন ফরমের সাথে জমা দিতে হবে।

এছাড়াও আবেদনকারীর বয়স বেশি হলে, প্রয়োজন অনুসারে নতুন ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামাও জমা দিতে হতে পারে। বেশি বয়সী নিবন্ধনকারীদের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব ও অন্যান্য বিষয়ে যাচাইয়ের জন্য কিছু নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে বাড়তি কাগজপত্র চাইতে পারে।

আরও পড়ুনঃ এন আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?

নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে

নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে আবেদনকারী ব্যক্তির ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদ, বাবা, মা, স্বামী/ স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি, PSC/ JSC/ S.S.C অথবা সমমান পরীক্ষার সার্টিফিকেট, হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ, রক্তের গ্রুপ, পেশাগত প্রমাণপত্র ও একটি সচল মোবাইল নাম্বার লাগে।

বর্তমানে নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য সর্বপ্রথম অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে আবেদন করার জন্য nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে উপযুক্ত প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়। অনলাইনে আবেদনের সময় আপনি যে সকল কাগজপত্রের ছবি আপলোড দিবেন সেগুলো উপজেলা নির্বাচন অফিসেও জমা দিতে হবে। 

আবার পরবর্তীতে, উপজেলা নির্বাচন অফিসে বায়োমেট্রিক কার্যক্রম, যেমন- ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, আই স্ক্যান ইত্যাদি করা হবে। এভাবে ধাপে ধাপে ভিন্ন ভিন্ন কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। 

আরও পড়ুনঃ ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম ২০২৪

নতুন ভোটার হালনাগাদের সময় করণীয় সমূহ 

বর্তমানে ভোটার আইডি কার্ডের সকল কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক করায়, আপনি বছরের যেকোন সময়েই নতুন ভোটার হতে আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে বেশি সময় লাগতে পারে এবং কিছু বাড়িতে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।

তাই অনেকেই সরকারিভাবে নতুন ভোটার হালনাগাদের সময় নিবন্ধন করে থাকে। সাধারণত বাংলাদেশের প্রতিটি কাহিনী নির্দিষ্ট সময়ের পর পর সরকারিভাবে ভোটার জরিপ করা হয়। এ সময় ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের তথ্য নিবন্ধনের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। তারপর সামগ্রিকভাবে তাদের নিবন্ধন করা হয় এবং নির্দিষ্ট দিনে বায়োমেট্রিক গ্রহন করা হয়।

নতুন ভোটার হালনাগাদের সময় ভোটার হতে চাইলে, করণীয় সমূহ হলো:

  • ধাপ ১: ভোটার হালনাগাদের সময় জরিপকারীদের কাছে আপনার পরিচয়বাচক তথ্য এন্ট্রি করা। 
  • ধাপ ২: উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে নতুন ভোটার আবেদন ফরম সংগ্রহ করে নির্ভুলভাবে পূরণ করা।
  • ধাপ ৩: নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম নিবন্ধন, পিতা-মাতার তথ্য সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্বাচন অফিসে জমা দেওয়া।
  • ধাপ ৪: উপজেলা নির্বাচন অফিসার থেকে উপযুক্ত তথ্য দিয়ে নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য অনুমোদন নেওয়া। 
  • ধাপ ৫: নির্দিষ্ট তারিখে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিস স্ক্যান করে বায়োমেট্রিক তথ্য দিয়ে আসা।

এসকল কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর, উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে আপনার তথ্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। তারপর সেখানে সবকিছু ঠিক থাকলে নতুন ভোটারের তথ্য নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে সাবমিট করা হবে। 

তারপর ১০-১৫ কার্যদিবসের মধ্যেই অনলাইনে আপনার আইডি কার্ডের তথ্য পাবেন। সেখান থেকে অনলাইন কপি ডাউনলোড করে সর্বত্রই ব্যবহার করতে পারবেন।

ভোটার আইডি কার্ড করতে কত টাকা লাগে

ভোটার আইডি কার্ড করতে কোন টাকা লাগে না। কারণ এটি একটি নাগরিক অধিকার। সরকারিভাবে এই পরিচয় পত্রটি দেশের প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিককে বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।

তবে আপনি যদি নিজে নিজে অনলাইনে আবেদন করতে না পারেন, সেক্ষেত্রে কোন IT Service প্রদানকারী কম্পিউটারের দোকান থেকে আবেদন করতে হবে। 

সেক্ষেত্রে আবেদনকারীকে কিছু সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। আবার আইডি কার্ড সম্পন্ন হওয়ার পর অনলাইন থেকে ডাউনলোড করার সময়ও প্রিন্ট ও ল্যামিনেশন করতে খরচ হয়ে থাকে।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, সরকারিভাবে কোন ফি না নেওয়া হলেও, বিভিন্ন উপজেলা কর্মকর্তাগণ সর্বমোট ৫০০ টাকা – ১,০০০ টাকা বা তারও বেশি ফি চেয়ে থাকে। তাই সক্ষেত্রে আপনার সুবিধা অনুযায়ী, ভোটার হালাগেদের সময় সরাসরি আবেদন করতে পারেন। সরকারিভাবে নিবন্ধন করলে কোন খরচ হবে না।

শেষকথা

এই ছিল নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে সে সম্পর্কে বিস্তারিত। এভাবে শর্তগুলো মেনে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো সংগ্রহ করে আপনিও নতুন ভোটার হতে পারবেন। ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *