ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেলে করনীয় কি? কিভাবে আইডি কার্ড পাবেন

ভোটার স্লিপ বা ভোটার নিবন্ধন ফরম হারিয়ে ফেলেছেন? তাহলে ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেলে করণীয় কি এবং স্লিপ ছাড়া কিভাবে আপনার আইডি কার্ড পাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এখানে। 

যারা ভোটার নিবন্ধনকারী, তাদের জন্য আইডি কার্ড হাতে পেতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হলো ভোটার স্লিপ। কিন্তু অনেক সময় আইডি কার্ড হাতে পাওয়ার আগেই এই স্লিপটি হারিয়ে যায়। এ সময় নতুন ভোটাররা অনেক বেশি দুশ্চিন্তার সম্মুখীন হয়।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ আপনি এই স্লিপটি পুনরায় সংগ্রহ করতে পারবেন। অথবা, এই স্লিপট ছাড়াও আপনার আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে সে সম্পর্কে আমাদের সঠিক পদ্ধতি জানা থাকা উচিত।

তাই ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেলে করণীয় কি এবং স্লিপ ছাড়াই কিভাবে আইডি কার্ড পাবেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এই লেখা থেকে।

ভোটার স্লিপ কি?

নতুন ভোটার নিবন্ধনের সময় আবেদনকারীকে একটি ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে হয়। এই ফর্মের নিচের অংশে ফরম নাম্বার ও নিবন্ধনকারীর নাম লেখা হয়। তারপর আবেদন জমা নেওয়ার সময় ফরমটি থেকে নিচের এই অংশটি কেটে আলাদা করে টোকেন হিসেবে আবেদনকারীকে দেওয়া হয়। 

এটিকে সাধারণভাবে ভোটার স্লিপ বলা হয়ে থাকে। এই স্লিপটি ব্যবহার করেই পরবর্তীতে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করা যায়। অন্যদিকে, ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য চেক করার জন্যও এই স্লিপে থাকা নাম্বারটি প্রয়োজন হয়। 

১০৫ নাম্বার থেকে ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার এসএমএস না পেলে, এই স্লিপ নাম্বারটি ব্যবহার করেই এনআইডি কার্ডের কপি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা যায়। তাই নতুন ভোটার নিবন্ধনকারীদের জন্য ভোটার স্লিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ Services nidw gov bd | NID কার্ডের সকল সেবা এক ঠিকানায়

ভোটার স্লিপ হারিয়ে ফেললে করণীয় কি?

ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেলে করণীয় হলো স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করে পুনরায় ভোটার ফরম নাম্বার/ ভোটার স্লিপ সংগ্রহ করা।

আপনার ভোটার ফরম বা ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেলে সর্বপ্রথম স্থানীয় থানায় একটি হারানোর জিডি করতে হবে। সেই জিডির কপিসহ উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানাতে হবে যে, আপনার ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেছে। 

তারপর নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা আপনার তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আপনাকে কিছু তথ্য জিজ্ঞাসা করবে। আপনি সবগুলো তথ্য সঠিকভাবে দিতে পারলে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পুনরায় আপনাকে একটি ভোটার স্লিপ বা পূর্বের স্লিপের নাম্বার দিয়ে দিবে।

ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেলে করনীয় কি

অধিকাংশ ক্ষেত্রে জিডি করা ছাড়াই, উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আপনাকে সাহায্য করবে।

যাইহোক, আপনি যদি ভোটার স্লিপ হারিয়ে ফেললেও স্লিপের নাম্বারটি জেনে রাখেন কিংবা আপনার NID নাম্বার যদি জানা থাকে, তাহলে কিছুই করতে হবে না। বরং আপনি সেই ভোটার স্লিপ নাম্বার বা NID নাম্বার ব্যবহার করেই আপনার NID বের করতে পারবেন।

ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেলে করনীয় আইডি কার্ড বের করার উপায়

ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেলেও ৩টি উপায়ে আপনি আপনার এনআইডি কার্ড বের করতে পারবেন। যথা: 

  • NID নাম্বার দিয়ে;
  • ভোটার নাম্বার দিয়ে;
  • এবং উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে পুনরায় ভোটার স্লিপ সংগ্রহ করে। 

যদি আপনি ভোটার স্লিপ হারিয়ে ফেলার পরও ফরম নাম্বার ভোটার নাম্বার জেনে থাকেন, তাহলে কিভাবে আইডি কার্ড বের করবেন সে সম্পর্কে প্রথমে জেনে নিন:

এনআইডি কার্ডের নাম্বার দিয়ে আইডি কার্ড পাওয়া

যদি এমন হয় যে, ভোটার নিবন্ধন করার পর আপনার ভোটার স্লিপ টি হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু, আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে ১০৫ নাম্বার থেকে আপনার এনআইডি নাম্বার জানিয়ে দেওয়া হয়।

তাহলে আপনি সেই nid নাম্বারটি ব্যবহার করেই অনলাইন থেকে আইডি কার্ড পেতে পারেন। এক্ষেত্রে সরাসরি services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। তারপর এসএমএসের মাধ্যমে প্রাপ্ত nid নাম্বার ও সঠিক জন্ম তারিখ লিখে সার্চ করুন। এবার পরবর্তী ধাপগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে সম্পন্ন করে ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য চেক করুন।

এভাবে চেক করার পর অনলাইন থেকে আপনার আইডি কার্ডটির কপি বের করে নিতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাবো ও কখন পাবো জেনে নিন

ভোটার নাম্বার দিয়ে NID কার্ড পাওয়া

ভোটার নিবন্ধন করে ফেলার পর, একটি নির্দিষ্ট এলাকার প্রতিটি ভোটারের তথ্য সেই এলাকার ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। এখান থেকে একজন ব্যক্তির ভোটার নাম্বার বের করা যাবে। 

অর্থাৎ আপনি যদি ভোটার স্লিপ হারিয়ে ফেলেন, তাহলে আপনার ভোটার এলাকার ভোটার তালিকা অনলাইন থেকে বের করুন। তারপর সেই তালিকাতে আপনার তথ্য লিপিবদ্ধ আছে কিনা খুঁজুন।

সেখান থেকে আপনার নাম, পিতা-মাতার নাম ও ভোটা নাম্বার পাবেন। তারপর সেই ভোটার নাম্বার ব্যবহার করেই আইডি কার্ডের অনলাইন কপি বের করে নিতে পারবেন।

একটি নির্দিষ্ট এলাকার ভোটার তালিকা পাওয়ার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বা চেয়ারম্যান সাথে যোগাযোগ করলেই হবে। এছাড়াও আইটি সার্ভিস প্রধানকারী কম্পিউটারের দোকান থেকেও এটি বের করে আনতে পারবেন। তারপর সেখান থেকে আপনার তথ্যটি খুঁজে নিলেই হবে। 

উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে পুনরায় ভোটার স্লিপ নেওয়া

ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেলে, উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে তা পুনরায় সংগ্রহ করা যাবে। এর জন্য সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে আপনার ভোটার স্লিপ হারিয়ে ফেলার ব্যাপারে জানাতে হবে।

পাশাপাশি এও বলতে হবে যে, আপনি আপনার ভোটার স্লিপ নাম্বার কিংবা এনআইডি নাম্বার জানেন না। তাহলেই কর্তব্যরত কর্মকর্তা আপনার প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে সেই ভোটার স্লিপার সিরিয়াল নাম্বারটি খুঁজে বের করবে। 

অবশ্য, এর জন্য আপনাকে কিছু তথ্য দিতে হবে। যেমন:

  • আপনার নাম,
  • আপনার জন্ম তারিখ,
  • আপনার জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি,
  • আপনার পিতা মাতার নাম, 
  • পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে),
  • এবং ঠিকানার তথ্য।

উপজেলা নির্বাচনে অফিসে যাওয়ার সময় আপনি এ সকল প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু গুলো সাথে নিয়ে যাবেন। 

এসকল তথ্যাদি ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করার পর, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আপনাকে পুনরায় ভোটার স্লিপ বা সেই স্লিপের নাম্বার প্রদান করবে। পরবর্তীতে আপনি সেই স্লিপ ব্যবহার করে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

নিউ আরও পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ড বাতিল করার নিয়ম ২০২৪

হারানো স্লিপের আইডি কার্ড বের করবেন যেভাবে

ভোটার আইডি কার্ডের স্লিপ হারিয়ে গেলে আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হবে কিছুদিন অপেক্ষা করা। কারণ, কিছুদিনের মধ্যেই আপনাদের মোবাইল নাম্বারে ১০৫ নাম্বার থেকে এসএমএস এর মাধ্যমে ১০ সংখ্যার একটি NID Number পাঠানো হবে। 

সেই নাম্বারটি থাকলে আপনার ভোটার স্লিপ বা অন্য কোন কাগজপত্রের প্রয়োজনই হবে না। সুতরাং কিছুদিন সেই এসএমএস পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। 

এসএমএস আসলে, NIDW ওয়েবসাইটে গিয়ে, আপনার NID নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করবেন। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার পর ড্যাশবোর্ড থেকে ডাউনলোড লেখাতে ক্লিক করে NID অনলাইন কপি বের করে নিতে পারবেন।

শেষকথা

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনি জানতে পারলেন, যে ভোটার স্লিপ হারিয়ে গেলে করণীয় কি এবং স্লিপ ছাড়া কিভাবে আইডি কার্ডটি বের করতে পারবেন। আশা করি, সম্পূর্ণ আলোচনাটি স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *